আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ,পাহারা দেন দুই ছাত্র!

৪ দিন আগে
ভারতের কলকাতায় একটি আইন কলেজের ভেতরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের এক ছাত্রী। কলেজের একজন সাবেক ও বর্তমান দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

পুলিশ জানায়, এ বিষয়ে ২৬ জুন কলকাতার কসবা পুলিশ স্টেশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন সাউথ কলকাতা ল কলেজের ওই ছাত্রী। অভিযোগপত্রে কলেজের ভেতরে ধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে স্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা দেন। 



অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী বলেছেন, ২৫ জুন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাকে যৌন নিপীড়ন করা হয়।

 

আরও পড়ুন:আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা / সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন আদালত


অভিযোগ দায়েরের পর ওই ছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষায় যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের এক কর্মকর্তা।

 

ওই ছাত্রীর অভিযোগের পর এরইমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ওই কলেজের সাবেক ছাত্র। বর্তমানে তিনি ফৌজদারি আইন পেশায় যুক্ত। বাকি দুজন কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী। তাদের চার দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল সিল করে দিয়েছেন এবং তদন্তের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে।

 

অভিযোগপত্রে ঘটনার বর্ণনায় ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, মূল আসামি মনোজিৎ মিশ্র তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ছাত্রী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে নিপীড়ন ও ধর্ষণ করা হয়।

 

মনোজিৎ সাউথ কলকাতা ল কলেজের সাবেক ছাত্র এবং কলেজের তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সাবেক প্রেসিডেন্ট।

 

ঘটনার দিনের বর্ণনায় ওই তরুণী বলেছেন, তিনি ২৫ জুন পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য দুপুর ১২টার দিকে কলেজে যান। তিনি আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ইউনিয়ন কক্ষে ছিলেন। সে সময় মনোজিৎ সেখানে আসেন এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ছাত্র ইউনিয়নে পদ দেয়ার প্রস্তাব দিতে শুরু করেন। ওই তরুণীকে ছাত্র ইউনিয়নের নারী শাখার সেক্রেটারির পদ দেয়া হয়।

 

সেদিন বিকেল প্রায় চারটার দিকে ওই তরুণী ইউনিয়ন কক্ষ থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান জেনারেল সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথা বলার সময় মনোজিৎ সেখানে আসেন। এরপর ইউনিয়ন ও তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের ভেতরে যেতে বলেন।

 

অভিযোগপত্রে ওই তরুণী আরও বলেন, একপর্যায়ে মনোজিৎ তাকে কক্ষের বাইরে ডেকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তরুণী তখন তার ছেলেবন্ধু আছে বলে জানান।

 

সন্ধ্যা প্রায় ৬টা ১০ মিনিটের দিকে তরুণী ও অন্যরা কক্ষ থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে মনোজিৎ ছাত্র ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি ও তরুণীকে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য থাকতে বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেনারেল সেক্রেটারি কিছু কাজ থাকার কথা বলে সেখান থেকে চলে যান।

 

মনোজিৎ একসময় তার সঙ্গে থাকা দুই ছাত্রকে কিছু একটা ইশারা দেন। তারা দুজন বের হয়ে বাইরে থেকে ইউনিয়ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন।

 

তরুণীর অভিযোগ, ইউনিয়ন কক্ষে মনোজিৎ তার সঙ্গে জোরজবরদস্তি করার সময় তিনি বাধা দেন এবং তাকে চলে যেতে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি মনোজিৎকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভয় ও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

 

ওই তরুণীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করা হলেও তারা সেটা করেনি। পরে তারা একটি ইনহেলার এনে দেন। তরুণী কিছুটা সুস্থবোধ করার পর চলে যেতে চাইলে দেখেন বের হয়ে যাওয়ার প্রধান ফটক বন্ধ।

 

ওই ছাত্রী নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে সাহায্য চান, কিন্তু তারাও সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

 

মনোজিতের কথা মতো তরুণীকে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তারক্ষীকে সেখান থেকে বের করে দেন তারা।

 

এরপর দুই ছাত্র বাইরে পাহারা দেন এবং কক্ষের ভেতর মনোজিৎ ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। তিনি বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সে সময় তাকে হকিস্টিক দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। তিনি তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য কাকুতি–মিনতি করেছিলেন বলেও জানান।

 

আরও পড়ুন:আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা: অভিযুক্ত সঞ্জয়ই দোষী, সোমবার সাজা ঘোষণা

 

মনোজিৎ যৌন নিপীড়নের সময়ের দুটি ভিডিও ধারণ করেন এবং সেগুলো দেখিয়ে তাকে ভয় দেখান।

 

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন