মঙ্গলবার (৩ জুন) সংগঠনটির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘বাজেটে রেভিনিউ আহরণকে প্রধান টার্গেট করা হয়েছে। এ বাজেটে করপোরেট কর ও ব্যক্তি খাতের করের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করা হয়েছে। পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কম। কিন্তু এটা যে বাড়বে, সে রকম কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই। করজাল বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ আমরা এ বাজেটে দেখছি না। বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যবসাবান্ধব হওয়া ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এসব লক্ষ্য অর্জিত হওয়া দুরূহ।’
তিনি বলেন, ‘উৎপাদন খাতের বড় শিল্পের কাঁচামালের ভ্যাট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমাবে আমি ঠিক জানি না। সবকিছু আইএমএফের ফর্মুলা অনুযায়ী করা হয়েছে। আইএমএফের ফর্মুলা ধরলে তো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনিতেই খরচ অনেক বেশি, জ্বালানির খরচ বেশি, ব্যাংক ঋণের সুদ অনেক বেশি, জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই।’
বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এতসব সংকেটর মধ্যেও যেসব ইন্ডাস্ট্রি মোটামুটি প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে সেখানেও শুল্ক ও কর বাড়ানো হয়েছে। গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী শিল্পের নগদ প্রণোদনা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর ফলে রফতানি খাত প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে। আমরা নগদ প্রণোদনার পরিবর্তে কোনো ফিসক্যান সাপোর্টও বাজেটে দেখছি না। কটন সুতা ও ম্যান মেইড ফাইবারের ওপর মূসক উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে জ্বালানি সংকটের মধ্যে দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো এই মূসক বৃদ্ধি করলে দেশি টেক্সটাইল ক্ষতির মুখে পড়বে এবং সুতা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। স্টিল শিল্পের কাঁচামালের ওপর কর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে ও সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামালে মূসক ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের আবাসন ও নির্মাণ শিল্প খাতে খরচ বেড়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৫-২৬ /কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান
ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করায় এসএমই খাত বড় ধাক্কা খাবে। এই হার পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় বিসিআই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে নতুন উদ্যোক্তারা ইএনটি এবং এসএমই ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি। তবে বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দকে স্বাগত জানিয়েছে বিসিআই। এছাড়া এসএমই খাতের ফরমালাইজেশন ও ডিজিটাল ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।
বিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে— সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে কমপ্লায়েন্স ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে, যাতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয় এবং জনগণ ও অর্থনীতি বাস্তব সুফল পায়।