অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই কাঁচাবাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার বেচাকেনা!

৪ সপ্তাহ আগে
মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। বাজারজুড়ে জমে থাকা নোংরা পানি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা। বাজারে প্রবেশ করলেই অনেকে বাধ্য হচ্ছেন নাক চেপে হাঁটতে।

সরেজমিনে শহরের প্রধান কাঁচাবাজার ও মুন্সীরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে মাংস, চারদিকে ভনভন করছে মাছি। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই বিক্রেতাদের মধ্যে; অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক। বিশেষ করে কাঁচাবাজারের মুরগি পট্টি এলাকায় অবস্থা আরও শোচনীয়। মুরগির পালক, নাড়িভুঁড়ি ও বর্জ্য ফেলে রাখায় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

 

স্থানীয় গৃহিণী রাশেদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাজারে এত গন্ধে দাঁড়ানোই যায় না। মুরগি পট্টি দিয়ে যেতে হলে নাক চেপে দৌড়াতে হয়। অথচ এখান থেকেই প্রতিদিন শত শত মানুষ খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন: ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

 

ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, ‘আমরা বাধ্য হয়েই এই বাজার থেকে কিনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থা নেই। পৌরসভা বা বাজার কর্তৃপক্ষেরও তেমন নজর নেই।’

 

চিকিৎসকদের মতে, এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা খাদ্যপণ্য খেলে সহজেই ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস কিংবা খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো রোগ ছড়াতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

 

বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বাজারের পরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও বাড়ানো হবে।

 

তবে সচেতন মহলের মতে, শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাদের দাবি, বাজারে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন, দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা, মাছ-মাংস-মুরগির জন্য আলাদা সেকশন তৈরি এবং স্বাস্থ্যসম্মত বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

 

আরও পড়ুন: বস্তিতে বসবাসকারী ও শিশুদের প্রায় ৫০ শতাংশ খর্বাকৃতির: আইসিডিডিআরবি

 

মুন্সীগঞ্জের প্রধান বাজারটির অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মাছ বাজারের পাশেই সবজি আর মাংসের কসাই পট্টি, আর একপাশে মুরগি পট্টি। পুরো বাজার ঘুরলেই ভক্তি হারিয়ে ফেলবেন যে কেউ। প্রায় এক দশক আগে বাজার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হলেও এখনও এর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

 

প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বেচাকেনা হয় এ বাজারে। অথচ সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে। মুন্সীগঞ্জ ক্যাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সরকার মন্টু বলেন, ‘অবস্থা এখন এতটাই নাজুক যে জরাজীর্ণ বাজার ভবনটি যেকোনো সময় ধসে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন