বুধবার (৪ জুন) এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নথিভুক্ত করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাদের।
পুলিশ বলছে, নির্দিষ্ট কাউকে নিশানা করে নানা কৌশলে তুলে নিয়ে ঘরে আটকে মারধর করে বিবস্ত্র করে নারীর সঙ্গে ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করছিলেন চক্রটির সদস্যরা।
গ্রেফতাররা হলেন- ময়মনসিংহ নগরের আকুয়া বোর্ড ঘর এলাকার বাসিন্দা মো. পাপ্পু (৩৫) ও একই এলাকার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে ফরহাদ আহমেদ (২৫)। আকুয়া গরু খোঁয়াড় মোড় এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
পুলিশ জানায়, নগরের চরকালীবাড়ি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে স্বপন মিয়া (২৯) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসকের প্রাইভেট কারের চালক। সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মাসকান্দা এলাকায় প্রাইভেট কারটি একটি গ্যারেজে রেখে বের হচ্ছিলেন। এ সময় ১০–১২ জনের একটি দল স্বপনকে ঘিরে ধরেন। দুজন স্বপন মিয়ার দুই পাশে চাকু ঠেকিয়ে সোজা হেঁটে যেতে বলেন। এরপর তাকে একটি টমটম গাড়িতে (ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার গাড়ি) তুলে আকুয়া গরু খোঁয়াড় মোড় এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যান।
ভুক্তভোগীর বরাতে পুলিশ জানায়, গাড়িতে স্বপনের সঙ্গে চালকসহ ছয়জন উঠেছিল। গরু খোঁয়াড় মোড় এলাকার বাসার একটি কক্ষে নিয়ে স্বপনকে মারধর করে সেখানে এক নারীকে আনা হয়। এরপর স্বপনকে বিবস্ত্র করে ওই নারীর সঙ্গে ছবি তুলে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের জন্য চলতে থাকে মারধর। একপর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে ফোন করে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা দেন। এরপর ছেড়ে দেয়া হয় স্বপন মিয়াকে। সোমবার রাত ৯টার দিকে গরু খোঁয়াড় মোড় থেকে একটি রিকশায় করে মাসকান্দা এলাকায় নিয়ে রেখে আসা হয় স্বপনকে।
ওই ঘটনা মঙ্গলবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন স্বপন মিয়া। কোতোয়ালি মডেল থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনের কথা উল্লেখ করেন। অভিযোগটি বুধবার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে পুলিশ মঙ্গলবার বিকেল থেকে স্বপন মিয়াকে নিয়ে সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযান চালাতে শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শনাক্ত করা হয় পাপ্পু ও ফরহাদকে। পরে তাদের আটক করে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বপন মিয়া বলেন, ‘গ্যারেজে গাড়ি রেখে বের হতেই চক্রটি অস্ত্র ঠেকিয়ে দেয়। নড়াচড়া করলে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। অস্ত্রের মুখে তারা একটি গাড়িতে করে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে ও নারীর সঙ্গে ছবি তুলে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আনায়।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
তিনি বলেন, ‘চক্রটির কারও সঙ্গে আমার পূর্বে কোনো বিরোধ ছিল না, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনিও না।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ নগরের ৩ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেন বলেন, ‘চাকু ধরে চালক স্বপন মিয়াকে তুলে নেয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধী চক্রটিকে আমরা শনাক্ত করে দুজনকে গ্রেফতার করেছি। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টার্গেট ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে নারীকে একই ঘরে রেখে ছবি তুলে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছিল। এই চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতারে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’
]]>