অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্রে গত ১৫ বছরে 'আতঙ্কিত হওয়ার মত' দুর্নীতির চিত্র

২ দিন আগে
অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটির তিন মাসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। রবিবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যত অর্থ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা “লুটপাট করেছে।” "শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ঙ্কর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মত," কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়। কমিটিকে তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত।" "আমাদের গরীব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে," তিনি বলেন। শেখ হাসিনার শাসনামলকে 'স্বৈরাচারী' আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল। অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে- কীভাবে “ক্রোনি পুঁজিবাদ” (চামচা পুঁজিবাদ) “অলিগার্কদের” (রাজনৈতিক প্রভাবশালী ধনকুবের) জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে। "সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও গভীর,” তিনি বলেন। উন্নয়ন প্রকল্পে 'লুটপাট' কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে ও কেনার ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে পরে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। "ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে," রহমান বলেন। কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, "গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।" কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ জানান, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেতে পারত। কমিটির আরেক সদস্য এম. তামিম বলেন, "বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ১০ শতাংশও যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয়, তাহলে তার পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার।"
সম্পূর্ণ পড়ুন