সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এ যৌথ অভিযান চালায়।
প্রথম দিন বেশ কয়েকটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ৩ একর জমি। প্রশাসন জানিয়েছে, নদীর সম্পূর্ণ এলাকা দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ দুই দিনের অভিযানে নদীর তীর থেকে ৬ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তবে আড়াই বছরের মধ্যে সেখানে আবারও গড়ে উঠেছে এক হাজারের বেশি স্থাপনা।
সোমবার সকাল ৯টায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কিছুটা দেরি হয়। প্রথমে জমির কাগজপত্র দেখিয়ে কিছু মালিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। যৌথবাহিনীর সহায়তায় বুলডোজার দিয়ে স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান জানান, বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ সময় জেলা প্রশাসনের ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনী ও র্যাব উপস্থিত ছিল।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদী রামু ও কক্সবাজার সদর অতিক্রম করে কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছড়া দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এর মধ্যে নুনিয়াছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই এলাকায় নির্মিত হয়েছে এক হাজারের বেশি স্থাপনা। ভূমি অফিস ও বিআইডব্লিউটিএর যৌথ তালিকায় প্রায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালী দখলদারের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন:
- বাংলাদেশের জলসীমা থেকে আরও ১৭ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
- কক্সবাজারে আকাশপথে নতুন দুয়ার, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড়বে অক্টোবরে
- মাছ ধরতে গিয়ে সাগরে ভেসে গেল ২ কিশোর, মাতামুহুরীতেও নিখোঁজ কিশোরী
২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং নদীর তীরের ৭২১ একর জমি হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় নদীবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং দখল চলতে থাকে।
২০২৩ সালে দুই দিনের অভিযানে ৩০০ একরের বেশি জমি দখলমুক্ত করা হলেও পরে ফের দখল হয়ে যায়। সেখানে পুনরায় তৈরি হয়েছে দুই শতাধিক স্থাপনা, দোকানপাট ও বসতবাড়ি। এমনকি টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমিও দখল করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকায় জমে উঠেছে বর্জ্যের স্তূপ, যা খননযন্ত্র দিয়ে নিচু এলাকায় ভরাট করা হচ্ছে।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বাঁকখালী নদীর সীমানা নির্ধারণ, সব অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত ও চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদসহ দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নে সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভা শেষে তিনি জানান, বাঁকখালী নদীর দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে নদীর সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হবে।’
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘বাঁকখালী নদীর দখল উচ্ছেদ অভিযান টানা পাঁচ দিন চলবে। প্রথম দিনেই ৩ একর জমি উদ্ধার করে সীমানা পিলার বসানো হয়েছে। পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত স্থাপনার মালামাল নিলামে তোলা হচ্ছে। এভাবে নদীর সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’
]]>