অপারেশন থিয়েটারে প্রসূতির মৃত্যুর পর পালিয়ে যান ডাক্তার-নার্সসহ ক্লিনিকের সব স্টাফ

২৩ ঘন্টা আগে
বাগেরহাটের মোংলায় সিজার করতে গিয়ে বৃষ্টি আক্তার নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ডাক্তারের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে মোংলা পৌর শহরের মাদ্রাসা রোড রাব্বি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই ক্লিনিক ফেলে পালিয়ে যায় মালিক, ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। ক্লিনিক সিলগালা করেছে প্রশাসন।

 

ভুক্তভোগীর স্বজন ও পুলিশ জানায়, মোংলা মিটাখালীর ঢালীরখন্ড এলাকার রুহুল আমিনের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারের (১৯) প্রসব বেদনা দেখা দিলে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতি মোংলা পৌর শহরের রাব্বি ক্লিনিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্তান ভূমিষ্টের জন্য দ্রুত সিজার করার পরামর্শ দেয়, না হয় পেটের সন্তান মৃত্যুর সম্ভাবনা বলে জানায় চিকিৎসক।  

 

দুপুরেই প্রসূতি বৃষ্টিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করলে একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে অপারেশন থিয়েটারেই বৃষ্টি আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এমন অবস্থায় রেখে স্বজনদের কিছু না জানিয়ে ক্লিনিক মালিক এনামুল, ডা. আল-মামুন ও জিয়াউল আহসানসহ নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা ক্লিনিক ফেলে পালিয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: গাইবান্ধার ‘মা ক্লিনিকে’ ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ


অপারেশন থিয়েটারে বৃষ্টি আক্তারকে মৃত্যু দেখে স্বজনেরা ডাক চিৎকার দিলে এলাকাবাসী ক্লিনিক ঘিরে ফেলে। খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে ছুটে আসেন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালক, সহকারী পুলিশ সুপারসহ পুলিশের একটি দল। এসময় সকলে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকেই ক্লিনিকের পাওয়া যায়নি।

উত্তেজিত জনতা ও বৃষ্টির স্বজনরা ক্লিনিকটি ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নির্দেশে ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। এমন ঘটনায় ৩ সদস্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলার  প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ ও স্বজনরা।

 

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহিন বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে এবং রাব্বি ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, এখানে যে সমস্ত রুগী রয়েছে তাদের মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে এবং সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চাকে অবজারভেশনে রাখা হবে। তার স্বজনরা চাইলে নিতে পারবে। আর বর্তমানে এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

মোংলা থানার পরিদর্শক মানিক চন্দ্র গাইন বলেন, ক্লিনিকে সিজারের সময় প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সহকারী পুলিশ সুপারসহ পুলিশের একটি দল এখানে পরিদর্শন করেছে। এছাড়া উত্তেজিত জনতা ক্লিনিকটি ভাঙচুরের চেষ্টা করছিল আমরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে ক্লিনিক মালিক, ডাক্তার নার্স বা অন্য কোনো স্টাফকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

 

আরও পড়ুন: প্রসূতির পেটে ১৮ ইঞ্চি কাপড় রেখেই সেলাই!


২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রসূতির মৃত্যু ও অপারেশনে পঙ্গত্ববরণ করার ৮টি ঘটনা ঘটেছে এই রাব্বি ক্লিনিকে। দুইবার সিলগারাও করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্ত আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে বের হয়ে আবারও ক্লিনিক ব্যাবসা চালাচ্ছে এনামুল হক।  
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন