অনলাইনে মাছ বিক্রি করে জাপান প্রবাসীর বাজিমাত

২ সপ্তাহ আগে
সাল ২০২০। কে এম আমির হোসেন থাকেন জাপানে। মা ফোন করে জানালেন, স্বাদ ও গন্ধে ভরা ইলিশ মাছ খেতে চান। ইলিশ খুঁজতে শুরু করেন আমির হোসেন। অনলাইনে ইলিশ বেচে এমন জায়গাগুলোয় নক করেন। শেষে পরিচিত একজনের মাধ্যমে চাঁদপুর থেকে তাজা ইলিশ এনে মাকে খাওয়ান। ইলিশ খেয়ে মা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলেন, বহুদিন পর আসল ইলিশ খেয়েছি। মায়ের কথা মনে ধরে আমিরের। সবাইকে ভালো ইলিশ খাওয়াতে মাছের ব্যবসার চিন্তা করেন তিনি।

বিদেশে বসে ব্যবসা

আমির হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার এলাকায়। বাবা কৃষক জোফর আলী। ২০১৭ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় জীবিকার তাগিদে জাপানে পাড়ি জমান আমির হোসেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানেই বাস করছেন এখনো। চাকরি করেন একটি রেস্টুরেন্টে। চাকরির পাশাপাশি হাতে থাকা মুঠোফোনে বাংলাদেশে চালিয়ে যাচ্ছেন অনলাইন ব্যবসা। এই ব্যবসার পরিধি এখন অর্ধকোটি টাকার ঘরে।


শুরুতেই বাজিমাত

শিক্ষাজীবনে ব্যবসার করার কথা ভেবেছিলেন আমির হোসেন। অনলাইনে ইলিশ বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন ২০২০ সালে। মায়ের নামে রাখেন ‘রেশমা অনলাইন শপিং’। ফেসবুকে এ নামে পেইজ খুলেন।


তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে মায়েদের আসল ইলিশ খাওয়াতে ব্যবসা শুরু করি। নিজেরও কিছু ব্যবসা হলো। ব্যবসা শুরুর প্রথম ২৮ দিনেই ১৪ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করি।’


মন পুড়েছিল তখন

শুরুতে ভালোই চলছিল ব্যবসা। ২০২০ সালেই ধাক্কা খান আমির হোসেন। সেসময় মা রেশমা বেগম মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর কোনো কিছুতেই মন বসছিল না তার। সবেমাত্র একটি ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছিলেন, সেটিও থমকে গেল। এরপর দেশে আসেন একবার। চাঁদপুর ইলিশ ঘাটে গিয়ে লোকজন ঠিক করে আসেন।


আরও পড়ুন: কফি চাষে মোখলেছুরের আয় লক্ষাধিক টাকা


আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ

রেশমা অনলাইন থেকে মাছ কিনতে আগে টাকা দিতে হয় না। ইলিশ নিয়ে টাকা দিতে হয়। কেউ চাইলে খেয়েও দিতে পারেন টাকা। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির নদী ও সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করেন আমির হোসেন।


আমির হোসেনের মন বড়

অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন মন কাঁদে আমির হোসেনের। ২০২৩ সালে নিজ এলাকায় দারুল উলুম নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কমপ্লেক্স নামে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন নিজ অর্থায়নে। ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থের ৮০ ভাগ চলে যায় এতিমখানার ফাণ্ডে।


আরও পড়ুন: রাঙামাটি /অ্যারাবিকা জাতের কফি চাষে হেক্টরপ্রতি আয় ১৪ লাখ টাকা!
 

আমির হোসেন বলেন, ‘মায়ের ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছে থেকে অনলাইনে ব্যবসাটির ধারণা আসে মাথায়। ইলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন নদী ও সামুদ্রিক মাছও বিক্রি হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, মানুষের খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখন আমার প্রায় অর্ধকোটি টাকার ব্যবসা চলছে। ১০ জন লোক নিয়োজিত এসব কাজে।’


এতিমখানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার এতিমখানায় বর্তমানে দুইজন শিক্ষক ও ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের সম্পূর্ণ খরচ আমি বহন করছি। সামনে এতিমখানাটি বড় করার ইচ্ছা আছে। ভবিষ্যতে সরকারি ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট (সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক নিবন্ধিত বেসরকারি এতিমখানাগুলোতে আর্থিক সহায়তা) পেলে এতিমখানার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন