রোববার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ শৃঙ্খলা বিধির কারণে দেশ ছাড়তে ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে। আইনজীবীরা বলছেন, এ আদেশের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ করে করা মামলা নিষ্পত্তি করতে কোনো বাধা থাকলো না।
১৯৯৪ সালে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড একধাপ নামিয়ে দেয়া হলে তৎকালীন জেলা জজ ও জুডিসিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ২১৮ জন বিচারক হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর অনেক বিচারক সে রিটে পক্ষভুক্ত হন। এই রিট শুনানির পর ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড নামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিচারকদের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করার বৈধতার প্রশ্নে রুল জারি করেন।
পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালের ৭ মে রুল যথাযথ ঘোষণা করে জুডিসিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস করার রায় দেন। তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সেই আপিলের শুনানি শেষে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার চূড়ান্ত রায় দেন।
আরও পড়ুন: সাবেক মন্ত্রী ইমরান ও প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আট বছর পর ২০০৭ সালে মূল নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়। তবে অপর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুলে থাকে।
এক পর্যায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে শুনানিতে বলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
বিধিমালাটি গ্রহণ না করে কিছু শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসকে সিনহা। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু দফায় দফায় সময় দেয়া হলেও সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে যায়। এক পর্যায়ে শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়েন ও পরবর্তীকালে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় হাসিনাসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন, আদেশ মঙ্গলবার
এস কে সিনহার ঘটনাবহুল পদত্যাগের পর ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির প্রকাশিত গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন।
তবে শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের ওপর শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব ফুটে উঠেছে দাবি করে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মইনুল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল।
]]>