অতিবৃষ্টিতে যশোরে সবজির ক্ষতি, বিপাকে চাষিরা

৪ দিন আগে
টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় যশোরে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেসব ক্ষেতে পানি সরে গেছে সেখানে ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চাষিরা বলছেন, এ মৌসুমের সব পরিশ্রম বিফলে গেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

যশোরে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে যশোর সদর উপজেলা, বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলায় পটল, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লালশাক, ডাটাশাক, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে গত দেড় মাসের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষাবাদ।

 

যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবাহাওয়া দফতরের তথ্যমতে, গত দেড় মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত জুনে যশোরে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৯৯ মিলিমিটার। চলতি জুলাইয়ের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮০০ মিলিমিটার।

 

আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢল ঠেকাতে আগাম আমন চাষে ব্যস্ত দুর্গাপুর-কলমাকান্দার চাষিরা

 

এ বৃষ্টিপাতের ফলে মাঠে মাঠে ফসলি ক্ষেতে পানি জমেছে। এ কারণে সবজির গাছে পচন দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেতের ফুল ও ফল ঝড়ে পড়ে গেছে। পাশাপাশি ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অধিকাংশ চাষি তাদের ক্ষেত ভেঙ্গে দিচ্ছেন। চাষিদের দাবি এ মৌসুমের চাষাবাদ পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে।

 

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকার সবজি চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, ‘গত দুই বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন সবজি করে ক্ষতির মুখে আছি। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত আরও বেশি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে যে আবাদ করেছিলাম তা সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পটল ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে, লাল শাক, বেগুন সব নষ্ট হয়ে গেছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে যে আবার আবাদ করব; বৃষ্টির কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টিপাতের কারণে আমরা কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তেমনি বাজারও এর প্রভাব রয়েছে। সাধারণ মানুষকে বাড়তি দামে সবজি কিনে খেতে হচ্ছে।’

 

সাতমাইল এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, ‘আমি ৬ বিঘা জমিতে পটল, করলা, ঝিঙে ও বেগুন চাষ করেছিলাম; যার সব নষ্ট হয়ে গেছে। গাছে পচন ধরেছে, ফল শুকিয়ে গেছে। চাষের টাকাটাও উঠাতে পারিনি। অন্তত ৫ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছি‌। নতুন করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে যে ক্ষতি পুষিয়ে নেব; টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অধিকাংশ জমিতে ধান রোপণ করেছি।’

 

মুরাদগড় এলাকার সবজি চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেড় মাস ধরে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সবজির ক্ষেতে পানি জমে গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। গাছ রক্ষায় দুই এক দফা ট্রিটমেন্ট করেছি। কিন্তু যে খরচ হয় তা সবজি বিক্রি করে উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আমার ১০ কাটা জমিতে ঢেঁড়স চাষ র রয়েছে। ট্রিটমেন্ট করে মাত্র ৪ কেজি ঢ্যাঁড়শ উৎপাদন করতে পেরেছি।’

 

আব্দুলপুর গ্রামের চাষি সাখাওয়াত আলী বলেন, ‘সামনে আরও দুই মাস গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রির সুযোগ ছিল। বৃষ্টির কারণে সেটা তো সম্ভব হয়নি বরং বিগত দেড় মাস ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। জমির লিজের টাকাও দিতে পারছি না। এ চালানে পুরো নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

 

একই গ্রামের চাষি আমিষ উদ্দিন বলেন, ‘মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিটা চাষি ক্ষতিগ্রস্ত। অধিকাংশ চাষির সম্পূর্ণ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সবজি ক্ষেতের ক্ষতির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজির রোপণ করা চারাও নষ্ট হয়ে গেছে। আব্দুলপুরে শত শত বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এই সবজির চাওয়া যশোরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।’

 

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে কৃষি জমি হচ্ছে পুকুর, নেপথ্যে কী?

 

তবে বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় রোপনকৃত চারাগুলো দ্রুত বড় হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তাছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে আগাম শীতকালীন সবজি করার প্রস্তুতিও নিতে পারছে না চাষিরা। ফলে কোটি কোটি চারা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। এই চারা আর বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এর ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন চাষিরা।’

 

অবশ্য ক্ষতির বিষয়ে চাষিদের সঙ্গে একমত নয় কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) সমরেণ বিশ্বাস বলেন, ‘বিগত দেড় মাস বৃষ্টিপাতের কারণে যশোর অঞ্চলের সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা শাকসবজি ও মরিচের মধ্যে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির আবাদ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমির ফসল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি। আশা করি আমরা ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।’

 

প্রসঙ্গত, কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় ১৫০ হেক্টর জমির শাকসবজি পরিপূর্ণ ও ৬৮১ হেক্টর জমির ৫০ শতাংশ শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন