অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট না থাকায় অপারেশন বন্ধ, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রোগীরা

১ সপ্তাহে আগে
অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট না থাকায় প্রায় এক মাস বন্ধ রয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম। হাসপাতালের সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্টের দুটি পদই শূন্য। এতে অপারেশন করতে না পেরে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রোগীরা। অনেকে বাধ্য হয়েই বাইরে অপারেশন করিয়ে নিচ্ছেন। ফলে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

জানা যায়, ৫০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। চিকিৎসক ও লোকবল সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।


অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্টরা রোগীকে অপারেশনের সময় জিএ, স্পাইনাল ও লোকাল অজ্ঞান করেন। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বাইরে থেকে হাজিরা চুক্তিতে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক এনে হাসপাতালে কোনো রকমে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ছোট অপারেশনগুলো করা হচ্ছে।


২০২৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া ডা. নুরুন্নাহার খামন নদী বদলী হয়ে যশোর হাসপাতালে যাওয়ায় পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। এরপর থেকে সদর হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া পদটি শূন্য রয়েছে। অপারেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যানেসথেসিয়ার দুটি পদই শূন্য রয়েছে।


আরও পড়ুন: সাতক্ষীরার সদর হাসপাতালটিই যেন রোগী


সার্জারি, গাইনি, জরুরি অর্থোপেডিক সার্জারিসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ মেজর ও মাইনর অপারেশন নিয়মিত হত সদর হাসপাতালে। কিন্তু জুনিয়র কানসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া পদটি শূন্য হওয়ায় এখন সব ধরনের অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়। তবে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ছোট অপারেশন করা হচ্ছে বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে।


২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সদর হাসপাতালে মেজর অপারেশন হয় ১০৭টি। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪১টি মেজর অপারেশন হয়। অ্যানেসথেসিয়া কসনালটেন্ট পদ শূন্য হওয়ার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে মেজর অপারেশনগুলো সম্পূর্ণ হয়। মার্চ মাসে মেজর অপারেশন না হলেও কিছু মাইনর অপারেশন হয়েছে।


চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সিনিয়র চক্ষু কনসালটেন্ট, সিনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট, জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট, সিনিয়র পেড কনসালটেন্ট, সিনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট, জুনিয়র ইএনটি কনসালটেন্ট, জুনিয়র রেডিওলোজিস্ট কনসালটেন্ট, রেডিওলোজিস্ট, মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জনের একটি করে পদ শূন্য রয়েছে।


আরও পড়ুন: অ্যানেসথেসিয়ার ব্যবহার নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা


দ্বিতীয়, তৃতীয়, ও চতুর্থ শ্রেণির ২৮টি পদ শূন্য রয়েছে। যার ফলে জেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের মূল পদগুলো খালি পড়ে রয়েছে। সুইপারের ৭টি পদের বিপরীতে ৪টি শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে, যার ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।


চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রতিদিন বহিরবিভাগে প্রায় ১২০০ রোগী, আন্তঃবিভাগে ৩০০ রোগী ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ২০০ রোগী চিকিৎসা নেন। চিকিৎসক, নার্সসহ দায়িত্বরতদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিদিন। সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট পদ দুটি শূন্য থাকায় জেলার ১২ লাখ মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।


রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, সাধারণ রোগীরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। তাদের বাইরে গিয়ে অপারেশন করাতে হচ্ছে। অনেকে টাকার অভাবে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সদর হাসপাতালের ওপর সবাই নির্ভরশীল। বাড়তি টাকা দিয়ে অপারেশন করা সম্ভব নয়।


আরও পড়ুন: সিলেট ওসমানী মেডিকেলে অ্যাম্বুলেন্স সংকট, ভোগান্তি


চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় জানান, অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট না থাকায় অপারেশন কাজে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অপারেশন হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ রোগীদের সেবা দিতে পারছি না। দ্রুত সংকট কাটলে আগের অবস্থায় ফিরতে পারবো।


চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালে নানা সংকট রয়েছে। অপারেশন কার্যক্রম সীমিত হয়েছে। লোকাল দিয়ে অপারেশন হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। আশাকরি হাসপাতালের সংকট দ্রুত কেটে যাবে। সমস্যার বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন